প্রারম্ভিক আলোচনা:

অধ্যায়টা গুরুত্বপূর্ণ। যত্ন সহকারে খুঁটিনাটি অংশগুলো মনে রাখতে হবে।

 

অধ্যায় সারবস্তু:

মানুষের শ্রেণিবিন্যাস:

পর্ব = Chordata

উপপর্ব = Vertebrata

শ্রেণী = Mammalla

বর্গ = Primates

উপবর্গ = Hominoidea

গোত্র = Hominidae

গণ = Homo

প্রজাতি = Homo sapiens

১. মানুষ হচ্ছে Primates বর্গীয় প্রাণী।

২. মানুষ সহ এ গোষ্ঠীতে ১৮৩ টি প্রজাতি রয়েছে। (মানুষ ছাড়া ১৮২ টি)

৩. ৩-৪ মিলিয়ন বছর আগে মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে।

৪. আধুনিক মানুষের উৎপত্তি হয়েছে মাত্র ৩৫-৪০ হাজার বছর আগে।

৫. বুড়ো আঙ্গুলকে অন্য আঙ্গুলের বিরুদ্ধ দিকে বাঁকিয়ে ধরার ক্ষমতাকে “অপোজেবল গ্রিপ” বলে। (opposite থেকে অপোজেবল)

৬. মানুষের দৃষ্টিশক্তি বিকশিত হওয়ায় ঘ্রাণশক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমেছে।

 

কঙ্কালতন্ত্র :

৭. অস্থি ও তরুণাস্থি মিলে কঙ্কালতন্ত্র গঠিত।

৮. অস্থিমজ্জা থেকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয়।

৯. অস্থি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সঞ্চয় করে।

১০. মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

ক) অক্ষীয় কঙ্কাল

খ) উপাঙ্গীয় কঙ্কাল

১১. অক্ষীয় কঙ্কালে অস্থি ৮০ টি এবং উপাঙ্গীয় কঙ্কালে ১২৬ টি। সব মিলিয়ে মোট অস্থির সংখ্যা ২০৬ টি।

অক্ষীয় কঙ্কাল:

১২. অক্ষীয় কঙ্কালকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

ক) করোটি (Skull)

খ) দেহকাণ্ড (Trunk)

১৩. ২৯ টি অস্থি নিয়ে করোটি গঠিত। করোটির অস্থি দু’ভাগ বিভক্ত:

ক) করোটিকা বা খুলির অস্থি (যা মস্তিষ্ককে রক্ষা করে)

খ) মুখমণ্ডলীয় অস্থি (মুখের বাহ্যিক গঠন দান করে)

১৪. করোটিকা ৮ টি চাপা ও শক্ত অস্থি নিয়ে গঠিত, এদের কিনারা খাঁজ কাটা হওয়ায় এরা ঘন সন্নিবেশিত ও দৃঢ়সংলগ্ন থাকে। এদের বর্ণনা:

  • ফ্রন্টাল = ১ টি
  • প্যারাইটাল (শব্দটির অর্থ দেয়াল, ফ্রন্টালের ঠিক পিছনেই) = ২ টি
  • টেমপোরাল (অন্যান্য প্রাণীতে থাকা কয়েকটি অস্থি এতে একীভূত হয়েছে) = ২ টি
  • অক্সিপিটাল অস্থি (occipital, caput অর্থ মাথা, আর অক্সিপিটাল মানে মাথার পেছনে) = ১ টি
  • স্ফেনয়েড অস্থি (spoon শব্দের সাথে সম্পর্কিত) = ১ টি
  • এথময়েড অস্থি (ethmos অর্থ ছিদ্র, চোখের কোটর যেখানে থাকে) = ১ টি

মোট = ৮ টি

১৫. মাথার পিছনের দিকে থাকা অক্সিপিটাল অস্থি অ্যাটলাসের সাথে করোটিকাকে যুক্ত করে।

১৬. টেমপোরাল অস্থির চারটি অংশ থাকে:

ক) খোলসাকার অংশ

খ) গম্বুজ

গ) ম্যাস্টয়েড অংশ

ঘ) টিমপ্যানিক অংশ (টিমপেনন অর্থ ড্রাম, কানের সাথে সম্পর্কিত)

১৭. টেরিগয়েড প্রসেস থাকে স্ফেনয়েড অস্থি তে।

মুখমণ্ডলীয় অস্থি:

১৮. মুখমণ্ডলীয় অস্থির বিভিন্ন অংশ:

  • ম্যাক্সিলা বা উর্ধ্ব চোয়াল (তেলাপোকায় যেমন থাকে) = ২ টি
  • ম্যান্ডিবল বা নিম্ন চোয়াল (ম্যান্ডিবল-ই একমাত্র নড়ন ক্ষম হাড়) = ১ টি
  • জাইগোম্যাটিক অস্থি (চোখের নিতে হাত বুলালে প্রতি গালে একটা করে যে হাড় পাওয়া যায়) = ২ টি
  • ন্যাসাল অস্থি (নাক)
  • ল্যাক্রিমাল অস্থি (ল্যাক্রিমা অর্থ অশ্রু) = ২ টি
  • ইনফিরিয়র ন্যাসাল কংকা (ইনফিরিয়র মানে নীচে, কংকা বলতে খোলস) = ২ টি
  • ভোমার = ১ টি
  • প্যালেটাইন অস্থি = ১ টি

১৯. একটি আদর্শ কশেরুকার যেসব অংশ থাকে:

  • দেহ
  • আর্চ

২০. আর্চ-এর অংশ:

  • পেডিকল (অর্থ পা)
  • ট্রান্সভার্স প্রসেস (উভয় পার্শ্বে লম্বা হাতের মত লম্বা অংশ)
  • ল্যামিনা (ল্যামিনেটিং শব্দের সাথে মিল রয়েছে)
  • আর্টিকুলার প্রসেস (যা দিয়ে একটির সাথে আরেকটা কশেরুকা পরস্পর যুক্ত থাকে)
  • স্পাইনাস প্রসেস: (এই উলম্ব প্রবর্ধন মাংসপেশীর সাথে আটকে থাকে)
  • কশেরুকার ছিদ্র ( যার ভেতরে স্পাইনাল কর্ড বা সুষুম্না কাণ্ড সুরক্ষিত থাকে।)

২১. কশেরুকার প্রকারভেদ:

  • সারভাইকাল (গলাদেশীয় বা গ্রীবাদেশীয় কশেরুকা) : ৭ টি
  • থোরাসিক (বক্ষদেশীয়) : ১২ টি, যেহেতু ১২ জোড়া পর্শুকা বা পাঁজর আমাদের রয়েছে।
  • লাম্বার (কোমর বা কটিদেশীয়) : ৫ টি
  • স্যাক্রাল (শ্রোণীদেশীয়) : ৫ টি > পরবর্তীতে ১ টি
  • কক্কিজিয়াল (পুচ্ছদেশীয়, লেজের জায়গায়) : ৪ টি > পরবর্তীতে ১ টি

২২. সারভাইকাল/ গ্রীবাদেশীয় কশেরুকা:

  • একদম সবার উপরের কশেরুকাকে বলা হয় অ্যাটলাস
  • অ্যাটলাসের পরবর্তী, ২য় গ্রীবাদেশীয় কশেরুকাকে বলা হয় অ্যাক্সিস
  • ৩য়-৬ষ্ঠ সাধারণ টাইপ।
  • ৭ম টিকে বলা হয় ভার্টিবা প্রমিনেন্স
  • ২য় থেকে ৬ষ্ঠ সারভাইকাল কশেরুকার স্পাইনাল প্রসেস দ্বিখণ্ডিত

২৩. অ্যাটলাস:

  • এর দেহ নেই। আর্টিকুলার প্রসেস নেই। তবে আর্টিকুলার ফ্যাসেট আছে।

২৪. অ্যাক্সিস:

  • ওডোন্টয়েড প্রসেস রয়েছে।

২৫. ভার্টিব্রা প্রমিনেন্স:

  • স্পাইনাস প্রসেস লম্বা ও অখণ্ডিত (২য়-৬ষ্ঠ দ্বিখণ্ডিত)
  • এ কশেরুকাকে মাঝে মাঝে সারভাইকাল পর্শুকা বলা হয়।

২৬. থোরাসিক বা বক্ষদেশীয় কশেরুকা:

  • পর্শুকার মাথার সাথে সংযোগের জন্য কোস্টাল ফ্যাসেট থাকে।

২৭. লাম্বার বা কটিদেশীয় কশেরুকা:

  • সমস্ত কশেরুকার মধ্যে এদের দেহ সবচেয়ে মজবুত
  • ম্যামিলারি ও অ্যাকসেসরি প্রসেস থাকে।

২৮. স্যাক্রাল কশেরুকা:

  • ৫টি স্যাক্রাল কশেরুকা ক্রমশ একীভূত হয়ে ২৬ বছর বয়সে স্যাক্রাম নামে অস্থি গঠন করে।

২৯. বক্ষপিঞ্জর:

  • একটি স্টার্নাম
  • ১২ জোড়া পর্শুকা
  • ১২ টি থোরাসিক কশেরুকা

৩০. স্টার্নাম:

  • জিগফয়েড প্রসেস থাকে।

৩১. পর্শুকা:

  • প্রথম ৭ জোড়া পর্শুকা তরুণাস্থি দিয়ে স্টার্নামের সাথে সংযুক্ত থাকে, এগুলোকে প্রকৃত পর্শুকা বলে।
  • বাকি ৫ জোড়াকে বলে নকল পর্শুকা।
  • ১১শ ও ১২শ পর্শুকা কে ভাসমান পর্শুকা বলা হয়।
  • ৭ম ও ৮ম পর্শুকার দৈঘ্য সবচেয়ে বেশি।

৩২. উপাঙ্গীয় কঙ্কাল:

  • বক্ষঅস্থিচক্র, দু’বাহু, শ্রোণীঅস্থিচক্র, দু’ পা নিয়ে উপাঙ্গীয় কঙ্কাল গঠিত।

৩৩. বক্ষঅস্থিচক্র:

  • ১ জোড়া (২টি) ক্লাভিকল
  • ১ জোড়া (২টি) স্ক্যাপুলা

৩৪. বাহুর অস্থি:

  • হিউমেরাস: উর্ধ্ববাহু
  • রেডিয়াস ও আলনা: নিম্নবাহু
  • কার্পাল: হাতের অস্থি, প্রতি সারিতে চারটি করে দু’সারিতে মোট ৮ টি
  • মেটাকার্পাল: করতলের অস্থি, সংখ্যা = ৫টি
  • ফ্যালাঞ্জেস: বৃদ্ধাঙ্গুলে ২ টি এবং অন্য চারটি আঙ্গুলে ৩ টি করে মোট ১৪ টি থাকে।

৩৫. শ্রোণী-অস্থিচক্র বা পেলভিক গার্ডল:

  • একটি ইলিয়াম, একটি ইশ্চিয়াম ও একটি পিউবিস নিয়ে একত্রিত হয়ে একটি হিপ বোন বা নিতম্বাস্থি গঠন করে, দু’টি নিতম্ব অস্থি মিলে শ্রোণী অস্থিচক্র।
  • অ্যাসিটাবুলাম নামক অগভীর অংশে ফিমারের মস্তক আটকানো থাকে।

৩৬. পা-এর অস্থি:

  • ফিমার : উর্ধ্ব পা
  • প্যাটেলা : ফিমার ও টিবিয়া-ফিবুলার সংযোগস্থলে ত্রিকোণাকার অস্থি
  • টিবিয়া ও ফিবুলা : নিম্ন পা
  • টার্সাল : ৭ টি
  • মেটাটার্সাল ও ফ্যালাঞ্জেস একই রকম ভাবে হাতের মত মোট ১৯ টি।

৩৭. অস্থিসন্ধি:

  • একেবারে অনড় অস্থিসন্ধি: করোটির অস্থিসন্ধি
  • সামান্য সঞ্চালনক্ষম : আন্তঃকশেরুকীয় অস্থিসন্ধি

৩৮. অস্থিসন্ধি তিন প্রকার:

  • তন্তুময় সন্ধি
  • তরুণাস্থিময় সন্ধি
  • সাইনোভিয়াল সন্ধি

৩৯. তন্তুময় সন্ধি:

  • সুচার : করোটিকার অস্থি
  • মিনডেসমোসিস : টিবিও ফিবুলা
  • গমফোসিস : দাঁত ও চোয়াল

৪০. তরুণাস্থিময় সন্ধি:

  • সিমফাইসিস : শ্রোণীদেশে, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থান
  • সিনকন্ড্রোসিস : স্টার্নামের সাথে প্রথম পর্শুকার সনিধ, বর্ধনশীল লম্বা হাড়ে

৪১. সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি:

  • সমতল অস্থিসন্ধি : দু’টি কার্পাল অস্থির মধ্যকার সংযোগ
  • বল ও কোটর অস্থিসন্ধি : স্কন্ধ সন্ধি
  • কন্ডাইলয়েড বা ডিম্বাকার অস্থিসন্ধি : হাঁটু সন্ধি
  • পিভট অস্থিসন্ধি : প্রথম দু’টি সারভাইকাল (গলাদেশীয় বা গ্রীবাদেশীয়) কশেরুকার মধ্যে
  • স্যাডল (ঘোড়ার জিন আকৃতির) অস্থিসন্ধি : বৃদ্ধাঙ্গুলের কার্পাল ও মেটাকার্পালের মধ্যকার সন্ধি
  • হিঞ্জ (কব্‌জা) অস্থিসন্ধি : কনুইয়ের সন্ধি

৪২. চলনে বিভিন্ন পেশীর ভূমিকা:

  • এক্সটেনশর : এক্সটেন্ড বা প্রসারিত করে। যেমন, ট্রাইসেপস সম্মুখ বাহুকে প্রসারিত করে।
  • ফ্লেক্সর : পেশী অঙ্গ কে দু’ভাজ করে। যেমন, বাইসেপস কনুই বা আঙুল কে বাঁকায়।
  • অ্যাবডাকটর : (অ্যাব = অ্যাওয়ে বা দূরে বোঝায়) দেহের অক্ষ থেকে অঙ্গ দূরে সরায়। যেমন, ডেলটয়েড পেশী।
  • অ্যাডাকটর : অঙ্গ দেহের কাছে টেনে আনে। যেমন- ল্যাটিসিমাস ডরসি।
  • ডিপ্রেসর : (নিচে প্রেস করা) অঙ্গকে নিচে নামায়। যেমন – ডিপ্রেসর ম্যান্ডিবুলা, চোয়াল নিচে নামায়।
  • লিভেটর: (লিফ্‌ট করে) অঙ্গকে নিচে থেকে উপরে তুলে। যেমন – ম্যাসিয়েটর, চোয়াল উপরে উঠায়।
  • রোটেটর: অঙ্গকে প্রধান অক্ষের চারপাশে ঘুরায়। যেমন – পিরিফর্মিস, ফিমার-এ অবস্থিত।
  • প্রোট্র্যাকটর: (“প্রোটেক্ট” না, প্রোট্র্যাকট) অঙ্গকে সামনে প্রসারিত করে।
  • রিট্র্যাক্‌টর: অঙ্গকে পেছনে প্রসারিত করে।