প্রারম্ভিক আলোচনা:

অধ্যায়টা বড়। অনেক কিছুই পড়ার রয়েছে। অধ্যায়টি বিশেষ যত্ন সহকারে পড়তে হবে। উদ্ভিদবিজ্ঞানের অংশে যে তথ্যগুলো আছে, তা এখানে আবার উল্লেখ করা হল না, প্রাণিবিজ্ঞান বইয়ের বিশেষ তথ্যগুলোই দেওয়া হল।

অধ্যায় সারবস্তু:

১. জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোকে “হটস্পট (Hotspot)” বলে। নরমান মায়ার্স এই শব্দের প্রচলন করেন।

২. ২৪ টি হটস্পট রয়েছে পৃথিবীতে।

৩. পৃথিবীতে পতঙ্গীয় আর্থোপোড-এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৭,৫১,০০০, এরপর উচ্চতর উদ্ভিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, প্রায় আড়াই লক্ষ।

৪. আমাদের ৯০% খাদ্য আসে মাত্র ২০ প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে।

৫. বোস্তামী কাছিম এদেশের একমাত্র এন্ডেমিক প্রজাতি। (এন্ডেমিক প্রজাতি বলতে বোঝায় যে প্রজাতির বাস শুধু নির্দিষ্ট একটি জায়গায়, আর অন্য কোথাও নয়)

৬. প্রতিসাম্যতা:

  • প্রোটোজোয়ায় গোলীয় প্রতিসাম্য দেখা যায়।
  • অরীয় প্রতিসাম্য দেখা যায় (দুই বা ততোধিক অংশে সমবিভাজন করা যায়) : হাইড্রা, সমুদ্র তারা ইত্যাদি।
  • দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম : তেলাপোকা, ব্যাঙ, মানুষ
  • অপ্রতিসাম্য (কোনভাবে সমান দুই ভাগে ভাগ করা যায় না) : অ্যামিবা, স্পঞ্জ, শামুক

৭. খণ্ডকায়ন:

  • অ্যানিলিডা পর্বে (যেমন: কেঁচো) বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার খণ্ডকায়ন পাওয়া যায়।
  • আর্থোপোডা পর্বে (যেমন: তেলাপোকা) শুধুমাত্র বাহ্যিক খণ্ডকায়ন পাওয়া যায়।
  • মেরুদণ্ডী প্রাণীতে (কশেরুকা, স্নায়ু গ্যাংলিয়া তে) আভ্যন্তরীণ খণ্ডকায়ন দেখা যায়।
  • শামুক, সমুদ্রতারা, এসব অপ্রতিসম প্রাণীর খণ্ডকায়ন নেই।

৮. মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত, মেসোডার্মীয় কোষস্তরে (পেরিটোনিয়ামে) আবৃত দেহগহ্বরকে “সিলোম” বলে।

৯. সিলোম:

  • অ্যাসিমোলেট (সিলোম বা দেহ গহ্বর বিহীন) : জেলী ফিশ, চ্যাপ্টা কৃমি
  • অপ্রকৃত সিলোমেট (সিলোম থাকলেও মেসোডার্মীয় কোষস্তর বা পেরিটোনিয়াম নেই) : কেঁচো কৃমি
  • প্রকৃত সিলোমেট (সিলোম + পেরিটোনিয়াম) : উন্নত প্রাণীতে (মলাস্কা, আর্থ্রোপোডা, কর্ডেটা)

১০. প্রোটোজোয়া:

  • অন্তঃকোষীয় প্রক্রিয়ায় খাদ্য পরিপাক করে।

(পুনরায় মনে করিয়ে দেওয়া: অন্তঃকোষীয় বলতে কোষের ভিতরে, আর আন্তঃকোষীয় বলতে একাধিক কোষের মধ্যে)

  • প্রতিকূল পরিবেশে “সিস্ট” নামক আবরণ তৈরি করে।
  • যেমন: Plasmodium vivax, Amoeba, Paramecium ইত্যাদি।

১১. পরিফেরা (Porus = ছিদ্র) :

  • দেহপ্রাচীর অস্টিয়া নামক অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। (কনফিউশন: অস্টিওসাইট বলা হয় অস্থিকোষকে)
  • এরা স্পঞ্জের মত
  • যেমন: Spongilla locustris ইত্যাদি।

১২. নিডারিয়া (Knide = রোম কাঁটা, Knife শব্দটার সাথে অল্প মিল আছে)

  • দেহত্বকে বিপুল নিডোব্লাস্ট নামক কোষ থাকে। (হাইড্রা অধ্যায়ে বিস্তারিত)
  • এরা দ্বিস্তরী (প্লাটিহেলমিনথেস থেকে শুরু করে উন্নত সকল প্রাণী ত্রিস্তরী)
  • খাদ্য বহিঃকোষীয় ও অন্তঃকোষীয়, উভয় ভাবেই পরিপাক হয়। (প্রোটোজোয়াতে শুধু অন্তঃকোষীয় পরিপাক হয়)
  • যেমন: হাইড্রা (Hydra virgis), জেলী ফিশ ( Aurelia aurita)

১৩. প্লাটিহেলমিনথেস : (প্লাটি = প্লেট-এর মত চ্যাপ্টা, হেলমিনথেস = কৃমি)

  • রেচনতন্ত্র শিখাকোষ নিয়ে গঠিত। (শিখাকোষ বৃক্ক-এর মত কাজ করে, বলা যায় প্রাথমিক যুগের বৃক্ক। শিখা কোষের ভেতরে সিলিয়া অনেকটা আগুনের শিখার মত দেখতে, তাই ইংরেজি তে নাম দেওয়া Flame Cell, যার বাংলা শিখা কোষ)
  • অ্যাসিলোমেট (সিলোম নেই)
  • যেমন, Fasciola hepatica বা যকৃত কৃমি (Hepatic = যকৃত), Toenia solium বা ফিতা কৃমি (ফিতা = চ্যাপ্টা)

১৪. নেমাটোডা : (নেমা = সুতা)

  • দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম
  • অপ্রকৃত সিলোম (পেরিটোনিয়াম স্তর নেই)
  • কোলাজেন নির্মিত পুরু কিউটিকল
  • মুখ ও পায়ু পর্যন্ত শাখাহীন পৌষ্টিক নালী।
  • যেমন: Ascaris lumbricoides (গোলকৃমি)

১৫. মোলাস্কা : মোলাস্কা = নরম (যদিও বাইরে অনেক শক্ত খোলস থাকে)

  • পরিপাকতন্ত্রে “র‍্যাডুলা” নামক অংশ রয়েছে।
  • যেমন: Octopus vulgaris (অক্টোপাস), Pila Globosa (আপেল শামুক)

১৬. অ্যানিলিডা : Annulus = আংটি (গায়ে অসংখ্য আংটির মত অংশ পাশাপাশি থাকে)

  • দেহ খণ্ডকায়িত (আংটির মত অংশ থাকে), দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম এবং প্রকৃত সিলোম বিশিষ্ট।
  • চলন অঙ্গ সিটি বা প্যারাপোডিয়া। (একাইনোডার্মাটা তে = “নালিকা পদ”)
  • রক্ত সংবহন তন্ত্র বদ্ধ ধরনের। (আর্থ্রোপোডা পর্বে যা উন্মুক্ত ধরনের) (বদ্ধ বলতে বোঝায় রক্ত কখনও রক্ত বাহিকার বাইরে বেরুতে পারে না, যেমন তেলাপোকার ক্ষেত্রে দেহ গহবরে রক্ত গিয়ে আবার রক্ত নালিকায় ঢুকে, তাই সেটি উন্মুক্ত। যেমন মানুষের রক্ত সংবহন তন্ত্র বদ্ধ, হৃদপিণ্ড > ধমনী > কৈশিক জালিকা > শিরা > হৃদপিণ্ড। কখনও উন্মুক্ত হয় না।)
  • রেচন অঙ্গ নেফ্রিডিয়া। (প্লাটিহেলমিনথেস-এ প্রাথমিকতম রেচনঅঙ্গ = শিখা কোষ)
  • যেমন: Hirudo medicinalis (জোঁক), Metaphire posthuma (কেঁচো)

১৭. আর্থ্রোপোডা : Arthos = সন্ধি, podes = পা, আর্থ্রোপোডাদের সন্ধিযুক্ত পা থাকে।

  • কিউটিকল নামক বহিঃকঙ্কাল রয়েছে।
  • রক্তে পূর্ণ দেহগহ্বর = হিমোসিল
  • রক্ত সংবহন তন্ত্র উন্মুক্ত ধরনের
  • প্রধান রেচন অঙ্গ মালপিজিয়ান নালিকা। (অ্যানিলিডা তে নেফ্রিডিয়া, আর প্লাটিহেলমিনথেস-এ শিখা কোষ)
  • যেমন: Periplaneta Americana (তেলাপোকা)

১৮. একাইনোডার্মাটা : (echinos = কাঁটা, derma = ত্বক) (তুলনা : Knide = রোমকাঁটা, Cnidaria)

  • অরীয় প্রতিসম, পঞ্চপার্শ্বীয়।
  • দেহের ভিতরে সিলোম থেকে সৃষ্ট অনন্য “পানি সংবহনতন্ত্র” রয়েছে।
  • এই পর্বের বেশিরভাগ প্রাণী সমুদ্রে অবস্থান করে।
  • অন্তঃকংকাল কাঁটাময় ডার্মাল (ত্বক) ক্যালকেরিয়াস অসিক্‌ল (bone) বা স্পিকিউল (spike থেকে spicule) দিয়ে গঠিত।
  • চলন অঙ্গ “নালিকা পদ”। (অ্যানিলিডা-এর চলন অঙ্গ “সিটা”)
  • যেমন : Asterias vulgaris (সমুদ্র তারা)

১৯. কর্ডাটা :

  • নটোকর্ড থাকে, যা উন্নত প্রাণীতে “মেরুদণ্ড”-এ পরিণত হয়।
  • হৃদপিণ্ড অঙ্কীয়দেশে অবস্থান করে। (বুকের দিকে)
  • এন্ডোস্টাইল পরে থাইরয়েড গ্রন্থিতে রূপান্তরিত হয়।

২০. ভার্টিব্রাটা : মেরুদণ্ডী প্রাণী

  • Chondrichthyes (কনড্রিন = তরুণাস্থি) এর অন্তঃকঙ্কাল তরুণাস্থিময়, অন্যদিকে, Osteichthyes (osteon = অস্থি) এর অন্তঃকঙ্কাল অস্থিময়।
  • উভচর প্রাণীর হৃদপিণ্ড তিন প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট। দু’টি অলিন্দ এবং একটি নিলয়। (নিলয় আকারে বড়, তাই কম, এভাবে মনে রাখা যেতে পারে)
  • অ্যামফিবিয়া বা উভচর-এর সামনের পায়ে চারটি করে এবং পেছনের পায়ে পাঁচটি করে নখ বিহীন আঙ্গূল থাকে।
  • রেগটিলিয়া বা সরিসৃপ-এর প্রত্যেক পায়ে পাঁচটি নখ যুক্ত আঙ্গুল আছে।
  • অ্যামফিবিয়া তে লার্ভা দশা থাকে, কিন্তু রেগটিলিয়াতে নেই।
  • রেগটিলিয়া-র হৃদপিণ্ড অসম্পূর্ণ ভাবে চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।
  • নন কর্ডাটায় হৃদযন্ত্র থাকলে তা থাকে পৌষ্টিক নালীর পৃষ্ঠদেহে, কর্ডাটায় অঙ্কীয়দেশে।
  • কর্ডাটার তিনটে উপপর্বের একটি ভার্টিব্রাটা, তাই সকল ভার্টিব্রাটাই কর্ডাটা পর্বের সদস্য, কিন্তু সকল কর্ডাটাই ভার্টিব্রাটা বা মেরুদণ্ডী প্রাণী না।